Saturday 1 March 2014

আজ তিতলির মন খারাপ !!


সেই যখন সকালে ঘুম থেকে উঠেছি, তখন থেকেই দেখছি আকাশটা মুখ ভাড় করে রেখেছে। মনে হচ্ছে বৃষ্টি আসবে। আকাশের সাথে সাথে আমার মনটাও ভালো নেই। কি কারনে মনটা ভালো নেই সেটা জানা থাকলেও একটু স্বস্তি লাগতো। সেটাও তো জানিনা। মন খারাপের জন্য দুই, আর কারন না জানার কারনে দুই, মোট চার। মন খারাপের মাত্রা চার।

 

আচ্ছা ২ গুন ২ করলেও তো ৪ হয় !!! মন খারাপ হওয়া শুরু করলে তা জ্যামিতিক হারে বাড়ে। সুতরাং থিওরী চেঞ্জ, দুই যোগ দুই সমান চার হবে না, এটা হবে দুই গুন দুই সমান চার। চার মাত্রার মন খারাপ অবশ্য খুব একটা ভয়াবহ ব্যাপার না। তবে চার মাত্রার মন খারাপের সমস্যা হল তা মনের মাঝে একটা সুক্ষ্ম যন্ত্রণা সৃষ্টি করে, যে যন্ত্রণা আছে বললেও ভূল হয় আবার উপেক্ষাও করা যায় না।

 

বিভিন্ন বিষয়ে থিওরী দেয়ার খেলাটা তিতলির খুব প্রিয়। তার যখন খুব মন খারাপ থাকে তখন সে এই খেলাটা খেলে। এই খেলাটা সে নিজে নিজেই আবিষ্কার করেছে। মন খারাপ থাকলে চিন্তার মাধ্যমে মনকে অন্য কিছুতে ডাইভার্ট করা আরকি। মনকে অন্য কিছুতে ডাইভার্ট  করার জন্য অবশ্য অন্য পদ্ধতিও আছে। যেমন ফেসবুকে বন্ধুদের সাথে কিছুটা সময় কাটানো। সেজন্য সে সকালে ঘুম থেকে উঠেই যখন দেখলো তার মন খারাপ তখন সে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিলো,

“স্যাডনেস ইজ মেজাজ খারাপ হওয়া....এর থেকেও বড় স্যাডনেস মেজাজ খারাপের কারন বুঝতে না পারা!!”

 

কিন্তু তাতেও তার মনটা ভালো হয়নি। বরং তার স্ট্যাটাসে কিংশুকের উলটাপালটা কমেন্টের কারনে তার মেজাজটাই গরম হয়ে গেছে। এই ছেলেটাকে সে যে দুচোখে দেখতে পারে না, সেটা সে তাকে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়ার পরেও কেন যে সে তার পিছনে এভাবে লাগে ??? উফ, বিরক্তিকর! আরে বাবা ভার্সিটিতেতো আরও অনেক ফ্রেন্ড আছে তুই তাদের পিছনে লাগ, আমার সাথে কেন??

 

ইমাম সাহেব মসজিদে আযান দিচ্ছেন। ই..মা..., নিশ্চয়ই বেলা একটা বাজে। জানালার কাছে দাড়িয়ে সে আকাশ দেখছিলো। আযানের ধ্বনি শুনে সে দেয়ালের ঘড়িটার দিকে তাকালো। ঘড়ির কাটা তিনটা একুশ মিনিট পাঁচ সেকেন্ডে গিয়ে থেমে আছে। মনটা আরও খারাপ হয়ে গেলো। গত একসপ্তাহ জুড়ে ঘড়িটা এই জায়গায় থেমে আছে...আব্বুকে কতবার করে বলেছিলো অফিস থেকে ফেরার সময় সে যেন একটা ব্যাটারি কিনে আনে। না, অফিস থেকে ফিরে প্রতিদিন  তার এক কথা - ইস, আজও ভূলে গেছি রে মা, কাল দেখিস ঠিকই কিনে আনব।

আব্বু কি তাকে আগের থেকে একটু কম আদর করছে ? যদি কম আদর নাইবা করছে তাহলে সামান্য ব্যাটারী আনার কথা ভূলে যাবে কেন !

আব্বুর উপর খুব অভিমান হচ্ছিলো তিতলির। মনে হচ্ছিলো সে এখুনি কেঁদে ফেলবে।

 

বাইরে টিপটিপ বৃষ্টি পড়ছে । তিতলি ভাবছে, আকাশের কি সুবিধা! যখন খুশি মন খারাপ করতে পারে আবার যখন খুশি কাঁদতেও পারে, তার লজ্জা বলে কিছু নেই। কিন্তু মানুষ চাইলেই কাঁদতে পারে না। তার কাঁদার জন্য কারন থাকা চাই। কেন?

মানুষের লজ্জা আছে, এই কি কারন....

জিতু রুমে ঢুকেই বললো, আপু দ্যাখ আব্বু আমার জন্য কি এনেছে !!!

জিতুর বয়স এবছর চার হল। বয়সে চার হলেও দুষ্টুমিতে সে চার ছাড়িয়ে গেছে। সারাদিন পুরো বাড়িটাকে সে মাথায় তুলে রাখে।

 

জিতুর হাতে দুইটা পেন্সিল ব্যাটারী দেখে তিতলির চোখে পানি চলে আসলো। আব্বু তাহলে কাল মনে করে ব্যাটারী এনেছে !!!

আপু নে একটা তোর আর একটা আমার, ব্যাটারীটা দিয়েই জিতু রুম থেকে চলে গেলো। তিতলি অনেক আগ্রহ নিয়ে ঘড়ির ব্যাটারীটা লাগালো। এখন তার মন খারাপ ভাব বেশ কিছুটা কমেছে। তার মনে হয় আনন্দ লাগা শুরু করেছে।

 

বাইরে মুষুল ধারে বৃষ্টি হচ্ছে....তিতলির খুব ইচ্ছে করছে বৃষ্টিতে ভিজতে, নিজের আনন্দের কিছুটা বৃষ্টির পানির সাথে সারা শহরে ছড়িয়ে দিতে।

মানুষ বড় অদ্ভূদ প্রাণী। সে তার নিজের আনন্দ কোননা কোন ভাবে প্রকৃতির মাঝে ছড়িয়ে দিতে চায়, আর দুঃখটাকে চায় নিজের মাঝে গোপন করে রাখতে।

 

কিছুক্ষণ পর তিতলির সাথে জিতুকে ছাদে ভিজতে দেখা গেলো।

(চলবে)

------------------------------------------------------------------------------

এই গল্পের সকল চরিত্র কাল্পনিক। বাস্তবতার সাথে গল্পের কোন সম্পর্ক নেই।

5 comments:

  1. ধন্যবাদ ভাইয়া....

    ReplyDelete
  2. well done bro. waiting for the next part :)

    ReplyDelete
  3. অ্যালগরদমিক কথাবার্তা......
    ভালৈ লাগলো ভাই

    ReplyDelete