Saturday 8 March 2014

আজ তিতলির মন খারাপ !!

(আগের অংশ)


সন্ধ্যা নেমেছে। তিতলি রুমের লাইটা বন্ধ করে জানালা দিয়ে সন্ধ্যামাখা কর্মব্যস্ত রাস্তার দিকে তাকিয়ে আছে। বৃষ্টির পর ল্যাম্পোস্টের সোডিয়াম আলোয় শহরের ভেজা রাস্তাটাকে একটু মনে হয় অন্যরকম লাগছে। বৃষ্টির কারনে সাময়িক বিরতি সবার মধ্যে কর্মব্যস্ততাকে আরও খানিকটা বাড়িয়ে দিয়েছে যেন

যদি তিতলির ভূল না হয় তাহলে রাস্তা দিয়ে এখন সে যাকে হেটে যেতে দেখছে সে কিংশুক।
হ্যাঁ, কিংশুকই। সন্ধ্যায় সে এপাড়ায় পড়াতে আসে। প্রথমদিকে যখন তিতলিরা ভার্সিটিতে ভর্তি হল তখন একদিন ফিজিক্স ক্লাসে তিতলি বুঝতে পারলো পিছন থেকে কে যেনো তার চেয়ারটা ঝাকাচ্ছেপিছনে ফিরে তাকাতেই পিছনে বসা ছেলেটা তাকে বললো - তুমি আফরিন দিবা না???
তিতলি বুঝতে পারছিলো না, এই ছেলেটা তার এই নামটা কিভাবে জানলো! সে সেদিন মাথা ঝাকিয়ে বলেছিলো – হ্যাঁ, আমি আফরিন।
ছেলেটা বললো - আমি কিংশুক।
তিতলি একটু হেসে আবার ক্লাসে মনযোগ দিলো। ক্লাসের সময় তিতলির কথা বলার আগ্রহ নেই এই বিষয়টি মনে হয় কিংশুক বুঝতে পেরেছিলো, সেকারনে সেও আর কথা বাড়াল না।

ক্লাস শেষে যখন তিতলি বাইরে বেরুচ্ছিলো, পিছন থেকে কিংশুক তাকে ডাকলো – এই আফরিন শুনো!
তিতলি পিছন ফিরে বলল – হ্যাঁ বলো।
-তোমার কি কোন ছোট নাম নেই? না মানে, এতোবড় নামে তো ডাকা সম্ভব না।
তিতলি হেসে ফেলেলো।
- হ্যাঁ, ছোট নাম আছে। তিতলি।
-বাহ! সুন্দর নাম তো
তিতলি অস্পষ্টভাবে শুনতে পেলো কিংশুক মনে হয় বিড়বিড় করে বলছিলো - তিতলি...তিতা...
-মানে?
-না, তিতলি তো অনেক সুন্দর নাম।
কথা ঘুরানোর জন্য কিংশুক বললো - আচ্ছা তোমাদের ফ্লাটে নাকি কোন আঙ্কেল তার মেয়ের জন্য টিউটর খুঁজছেন? আমি আসলে একটা টিউশনি করাবো ভাবছি।
-আমাদের ফ্লাটে? কই না তো। তবে আমাদের পাশের ফ্লাটে, রহমত চাচা উনার মেয়ের জন্য প্রাইভেট টিউটর খুঁজছেন। কিন্তু তুমি কিভাবে জানলে ?
-সাকিব আমাকে বললো। তুমি নাকি ওকে জিজ্ঞেস করেছিলে ও পড়াবে কিনা ?
-ও তাই বলো। সাকিব আমি একই কলেজে পড়েছি। তার সাথে যেহেতু আগে থেকেই জানাশুনা তাই ভাবলাম ওকে বলি ও পড়াবে কিনা। কিন্তু ও বলেছিলো ও নাকি পড়াবে না। ঠিক আছে আমি রহমত চাচার সাথে আজই কথা বলব।
তিতলি সেদিনই রহমত চাচার সাথে কথা বলে কিংশুককে এই প্রাইভেটটা নিয়ে দিয়েছিলো।

-এই সন্ধ্যাবেলা রুম অন্ধকার করে রেখেছিস কেনো? তিতলির মা রুমের লাইটা জালিয়ে দিতে দিতে জিজ্ঞেস করলো।
-কেনো লাইট জালিয়ে রাখিনি সেটা তুমি বুঝবে না মাতুমি লাইটটা বন্ধ করে দাও তো।
-কি এমন ব্যপার যে আমি বুঝবো না?
তিতলি আগ্রহী স্টুডেন্টকে বুঝানোর ভঙ্গী করে কারণ ব্যাখ্যা করা শুরু করে দিলো,
-সৃষ্টিকর্তা কি করেন ? বলতো মা ।
-লাইট বন্ধকরে রাখার সাথে সৃষ্টিকর্তার সম্পর্ক কি?
-আছে আছে। সৃষ্টিকর্তা আমাদের সবার সব কাজ দেখছেন, তাঁর কাছে আমাদের লুকানোর  কিছু নেই। কিন্তু তাকে কি আমরা দেখতে পারি?
তিতলি উত্তরের অপেক্ষা না করেই নিজে থেকে বলে যেতে লাগলো - পারি না। আমিও নিজেকে লুকিয়ে রাস্তার মানুষজনকে দেখছি কিন্তু আমাকে কেউ দেখতে পারছে না। লুকিয়ে লুকিয়ে সবকিছু দেখতে সৃষ্টিকর্তার কেমন লাগে তা বোঝার চেস্টা করছি।

তিতলির মা আর না হেসে পারলেন না – জানিনা বাবা, তোর যতসব পাগলামি। নে অনেক হয়েছে এবার জানালাটা বন্ধ করে দে। কথাগুলো বলেই তিনি রুম থেকে বের হয়ে গেলেন।

জানালাটা লাগিয়ে দিতে গিয়ে তিতলি বুঝতে পারলো তার শীত শীত করছে, গা টাও মনে হয় খানিকটা গরম।

(চলবে) 

------------------------------------------------------------------------------

এই গল্পের সকল চরিত্র কাল্পনিক। বাস্তবতার সাথে গল্পের কোন সম্পর্ক নেই।

5 comments:

  1. অসাধারন দোস্ত ... তুই আবার সবার মতো কিংশুকের সাথে প্রেম বানায় দিস না । তোর কাছে এইটা আশা করি না । :p

    ReplyDelete
  2. হা হা হা....দেখা যাক, আমি নিজেও জানি না গল্পের মোড় কোনদিকে ঘুরে যাবে....যদি তিতলির ভালো লেগে যায় তাহলে তো আর করার কিছু থাকবে না...তবে চমতকার কিছুই ঘটবে...!!!

    ReplyDelete
  3. সিরিজ গল্প লিখতে আর কি লাগে জানিনা, কিন্তু বড় কলিজা লাগে। ধৈর্যের সাথে দরদাম করে শেষ পর্যন্ত টেনে নিয়ে যাওয়া আমার কাছে অনেক চ্যালেঞ্জিং মনে হয়। দারুণ একটা পরিণতি দেখার অপেক্ষায় থাকলাম ভাই। :) <3

    ReplyDelete
    Replies
    1. ধন্যবাদ দাদা।
      দেখা যাক শেষটা কি হয়... :)

      Delete
  4. অসাধারন...পরের অংশ কবে আসবে?

    ReplyDelete